প্রকাশিত: Tue, Feb 6, 2024 1:20 AM
আপডেট: Thu, Jun 26, 2025 8:36 AM

[১]মিয়ানমার থেকে আসা মর্টারশেলের আঘাতে বান্দরবানে বাংলাদেশি নারীসহ নিহত ২ [২]বিদ্রোহীদের ধাওয়ায় দুইদিনে পালিয়ে এসেছে ১০৬ সীমান্তরক্ষী [৩]সীমান্তবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ

বাবুল খাঁন: [৪]  মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর(বিজিপি) সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে বিদ্রোহী আরকান আর্মির। আরকান আর্মির দখলে নেওয়া তুমব্রু রাইট ক্যাম্প লক্ষ্য করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অ্যাটাক হেলিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে।  আরাকান আর্মিও পাল্টা জবাব দিচ্ছে। 

[৫] সোমবার বেলা সোয়া ২টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামে মিয়ানমার থেকে  ছোঁড়া মর্টারশেলে স্থানীয় এক নারী ও রোহিঙ্গা শ্রমিক নিহত হয়েছে।  

[৬] নিহত হোসনে আরা জলপাইতলী গ্রামের বাদশা মিয়ার স্ত্রী। তবে রোহিঙ্গার পরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি বাদশা মিয়ার বাড়ির শ্রমিক ছিলেন। 

[৭] নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি আব্দুল মান্নান বলেন, দুপক্ষের গোলাগুলির সময় মর্টার শেল এসে বিস্ফারিত হয়েছে। তখন ঘটনাস্থলে দুজন নিহত হয়েছেন। 

[৮] ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, রোহিঙ্গা ব্যক্তিকে দুপুরের খাবার দেওয়ার জন্য রান্নাঘরে যান হোসনে আরা। তখন মর্টারশেলটি এসে রান্নাঘরের ওপর পড়ে।

[৯] বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সীমান্তে বসবাসকারী জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে কাজ করছে। সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এলাকায় অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, কোনোভাবেই যেন বহিরাগত নাগরিক অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখছে পুলিশ প্রশাসন।

[১০] মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষে দুদিনে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১০৬ জন সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। সোমবার বিজিবি কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম এ তথ্য  জানিয়েছে। 

[১১] স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজাহান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এতদিন মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে যে গুলি ও বোমার শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল গত দুই তিন দিনে এটি বেড়েছে। মানুষের বাড়িঘড়ের ছাদের ওপরে গুলি, মর্টার শেলের খোসা পড়ছে। আতঙ্কিত হয়ে বাড়িঘর ছাড়ছে এলাকাবাসী।

[১২] শাহজাহান বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমি আমার পরিবারকে উখিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছি। এমন অনেকেই তাই করেছে। কেননা মানুষ বাড়িঘরে থাকতে ভয় পাচ্ছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে এইসব এলাকার কেউ আর বাড়িতে থাকার সাহস পাচ্ছে না।

[১৩] এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শরিফুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, এলাকা থেকে সব মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। কারণ, অনেক দূর থেকে বোমা এসে পড়ছে। তারা রিমোর্ট কন্ট্রোল সিস্টেমে অনেক ভেতর থেকে বোমা মারতেছে।

[১৪] এলাকার বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, ঘণ্টা খানেকের মধ্যে দুই চারটা বোমা এসে পড়তেছে এলাকায়। এই কারণে সবাই বাড়িঘর ছাড়ছে। সীমান্ত এলাকার কয়েকটি গ্রাম এখন প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে বলেও জানান তারা।

[১৫] “আমরা যতটুকু সম্ভব এলাকাবাসীদের পাশে আছি। কিন্তু কতক্ষণ ধরে তাদের সাহস যুগিয়ে রাখা যাবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমরা জনগণকে সামলানোর চেষ্টা করছি”, বলেন শরিফুল ইসলাম। সম্পাদনা: ইকবাল খান


[১]মিয়ানমারের ১০ সীমান্তরক্ষী ও ৬ বিদ্রোহী  কক্সবাজারে চিকিৎসাধীন

হাবিবুর রহমান সোহেল: [২] মিয়ানমার অভ্যন্তরে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাতে পিছু হটে ৯৫ জন সীমান্তরক্ষী পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। 

[৩] তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত বেশ কয়েকজন উখিয়া, কক্সবাজার জেলার সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

[৪] বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবির তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারে হাসপাতালে আহত ১০ জনের চিকিৎসা চলছে বলে নিশ্চিত করেন বিজিবি। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রেও এ তথ্য জানা গেছে।  

[৪] কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির দুই সদস্যকে আহত অবস্থায়  রোববার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। সোমবার সকালে আরও ৮ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। 

[৫] হাসপাতালে কঠোর নিরাপত্তায় তাদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না কোন গণমাধ্যমকর্মীকে।

[৬] সূত্র জানায়, কক্সবাজার শহরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে আহত অবস্থায় বিদ্রোহী  রোহিঙ্গ আরাকান আর্মির (আরএসও) ৬ সদস্যকে ভর্তি করা হয়েছে। তারা   রোববার বেলা  ১টায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবেশ করেন। আহতরা রাখাইন রাজ্যের বুচিডং, টাংগো এবং ম্রাউ এলাকার বাসিন্দা। 

[৭] এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

[৮] তিনি জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্তসহ জেলার আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর একযোগে কাজ করছে। 

[৯] বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, বিজিবি তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে আহত ১০ জন সদস্যকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্পাদনা: ইকবাল খান, মুরাদ হাসান

[১]সেনা ও বিজিবিকে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর  

মনিরুল ইসলাম: ]২] আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জাতীয় সংসদে এ কথা জানিয়েছেন।  

[৩] বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ মজিবুল হক চুন্নু সংসদে জানতে চান, মিয়ানমারে যুদ্ধপরিস্থিতিতে আমাদের বর্ডার এবং স্থানীয় মানুষগুলোর নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের পক্ষ থেকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

[৪] প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বা প্যারামিলিটারী বাহিনীর (বিজিবি) সদস্যদের ধৈর্য ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বর্ডারের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

[৫] আনিসুল হক বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটা আলোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলমান এ পরিস্থিতি বাংলাদেশ খুবই  নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এ বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব